শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কোরবানির পশু প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সাতক্ষীরার খামারিরা। কালের খবর চট্টগ্রামের ইপিজেডে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন, ঘটনায় জড়িত মূল হোতাসহ ২জন গ্রেপ্তার। কালের খবর রাজধানী ঢাকা শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না : সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। কালের খবর সাতক্ষীরায় দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে ইয়াছিন আলীকে কুপিয়ে জখম। কালের খবর সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধের বালুভর্তি জিও বস্তায় ফাটল। কালের খবর শাহজাহান আবদালীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। কালের খবর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প নিচ্ছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কালের খবর মাটিরাঙ্গার অপরাধ আখড়া রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ( QD’S ) সিসা লাউঞ্জের নামে চলছে ব্ল্যাকমেইলসহ মাদক বাণিজ্য। কালের খবর গ্যাস সরকারি, বিল যাচ্ছে দালালের পকেটে
নবীনগরের রাফি ভূঁইয়া হত্যাকান্ড নিরপরাধ দুই যুবক আসামী এলাকাবাসীর ক্ষোভ । কালের খবর

নবীনগরের রাফি ভূঁইয়া হত্যাকান্ড নিরপরাধ দুই যুবক আসামী এলাকাবাসীর ক্ষোভ । কালের খবর

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি, কালের খবর :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের আহাম্মদপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম ওরফে রাফি ভ‚ইয়া-(১৯) হত্যা মামলায় এলাকার দুই নিরপরাধ যুবককে আসামী করা হয়েছে । এতে করে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী।
একটি ইভটিজিং ঘটনার জের ধরে গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় আহাম্মদপুর গ্রামের নিয়ামুল ভূইয়ার ছেলে আরিফুল ইসলাম ওরফে রাফি ভ‚ইয়াকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে একই গ্রামের বিল্লাল মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ প্রদীপ-হাসান-(২০)।এ ঘটনায় ৩০ মার্চ নিহত রাফি ভ‚ইয়ার পিতা বাদি হয়ে তিনজনকে আসামী করে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার আসামীরা হলেন আহাম্মদপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ প্রদীপ-হাসান-(২০), স্বপন মিয়ার ছেলে আল-রাফি-(১৭) ও মৃত হুরন মিয়ার ছেলে শিমুল মিয়া (১৮)। পুলিশ ইতিমধ্যেই প্রদীপ হাসানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। এলাকাবাসীর দাবি আল-রাফি ও শিমুল নিরপরাধ। তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পূর্ব শত্রæতার জের ধরে তাদেরকে আসামী করা হয়েছে।
এই দিকে এই হত্যাকান্ডকে ইস্যু করে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মানববন্ধন শেষে তৃতীয় একটি পক্ষ পুর্ব বিরোধের জের ধরে সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় পরিকল্পিতভাবে প্রদীপ হাসানের পরিবারকে এলাকা ছাড়া করতে বাড়ি ঘরে হামলা,মারধর, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় ওই পরিবারের ৭মশ্রেনীতে পুড়–য়া মেয়েকে লঞ্চিত করা হয়।
কালের খবরের অনুসন্ধানে জানা যায়, আহাম্মদপুর গ্রামের একটি মেয়েকে প্রায়ই উত্যক্ত করতো একই গ্রামের কাজল চৌধুরীর ছেলে রিসান চৌধুরী। এনিয়ে ওই মেয়ের ভাই আল রাফির সাথে রিসান চৌধুরীর বিরোধ চলে আসছিল। গত ২৮ মার্চ বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য আল রাফির বন্ধু-বান্ধব সহ উভয়পক্ষের ১০/১৫ জন যুবক আহাম্মদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনায় বসেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে রিসান চৌধুরীর পক্ষের লোকজন প্রদীপ হাসানকে মাধর করে।পরে প্রদীপ ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরি বের করে সবাইকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় রিসানের লোকজন প্রদীপকে ধরার জন্য তার পেছনে ধাওয়া করে।
এমন সময় গ্রামের নিয়ামুল ভূইয়ার ছেলে আরিফুল ইসলাম ওরফে রাফি ভ‚ইয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির পাশের একটি দোকানে মোবাইলে ফেক্সিলোড করছিলেন। এ সময় তিনি ধর ধর আওয়াজ শুনে ফেক্সিলোডের দোকান থেকে বের হয়ে দেখতে পান প্রদীপ হাসান ছুরি নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তখন আরিফুল ইসলাম ওরফে রাফি ভ‚ইয়া প্রদীপের গতিরোধ করে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে প্রদীপ রাফি ভূইঁয়ার বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।
আরিফুল ইসলাম ওরফে রাফি ভ‚ইয়া হত্যা মামলার স্বাক্ষী বায়েজিদ চৌধুরীর ছেলে ও নিহতের চাচতো ভাই রিফাত চৌধুরী বলেন, রাফিকে ছুরিকাঘাত করার সময় আল-রাফি ও শিমুল ঘটনাস্থলে ছিলোনা। তারা অনেক দূরে একটা ব্রীজের পাশে ছিলো। প্রদীপ হাসান একাই রাফি ভ‚ইয়াকে ছুরিকাঘাত করেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও একই এলাকার বাসিন্দা সাব্বির ভ‚ইয়া বলেন, রাফি ভ‚ইয়াকে ছুরিকাঘাত করার সময় আল রাফি ও শিমুল ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাদেরকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে।
আল-রাফির পিতা স্বপন মিয়ার বলেন, ঘটনার সময় আমার ছেলে সেখানে ছিলোনা। মেয়েকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদে আমার ছেলে আল রাফি বন্ধুদের কাছে বিচার চাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে আসামী করা হয়েছে। নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবী করে তিনি বলেন, আমি রাফি ভ‚ইয়া হত্যাকান্ডের বিচার চাই। আমি চাই পুলিশ সম্পূর্ন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র তৈরী করুক।

অপরদিকে রাফি ভ‚ইয়ার হত্যাকান্ডের তিনদিন পর একই এলাকার তুফাজ্জল ভ‚ইয়া, জামাল ভ‚ইয়া ও মারজান চৌধুরীর নেততৃত্বে তাদের সহযোগীরা আসামী প্রদীপ হাসান ও শিমুলের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটতরাজ করে। এসময় বাড়ির এক কিশোরীকেও লাঞ্চিত করা হয়। এ ঘটনায় প্রদীপ হাসানের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে এজাহারভূক্ত ২৫জনসহ অজ্ঞাতনামা ৮০জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
প্রদীপ ও শিমুলের বাড়িতে হামলার ঘটনার স্বাক্ষী মাহবুব মেম্বার বলেন, তুফাজ্জল ভ‚ইয়া, জামাল ভ‚ইয়া ও মারজান চৌধুরীর নেতৃত্বে তাদের সহযোগীরা প্রদীপ ও শিমুলের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বটতলী থেকে মানবববন্ধন শেষে মিছিল নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যায়। পরে সেখান থেকে এসে দুই বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটতরাজ করে। হামলাকারীদের কাছ থেকে শুনেছি,চেয়ারম্যান এ হামলার নির্দেশ দিয়ে সেখান থেকে সরে যায়।

এ ব্যাপারে আসামী প্রদীপ হাসানের মা জাহানারা বেগম বলেন, রাফি ভ‚ইয়া হত্যাকান্ড একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা।আমার ছেলের সাথে নিহত আরিফুল ইসলাম রাফির কোনো প্রকারের বিরুধও ছিলনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, লাউর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে ও উস্কানিতে আমাদেরকে এলাকাছাড়া করে সম্পত্তি দখলের জন্য আমার বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়।
এ ব্যাপারে নিহত আরিফুল ইসলাম ওরফে রাফি ভ‚ইয়ার পিতা নিয়ামুল ভূইয়া বলেন, আমার ছেলে কোনো দোষ করেনি। আমার নিরপরাধ ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এ ব্যাপারে লাউরফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই ঘটনায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সম্পূর্নটা ভিত্তিহীন, হামলার ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলার মূল আসামী প্রদীপ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করার মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদেরকেও গ্রেপ্তরের চেষ্টা চলছে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com